সমস্ত লেখাগুলি

সমকামীতাকে বিজ্ঞানের চোখে দেখুন? -
মুজিব রহমান
May 20, 2025 | সচেতনতা | views:3 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আমার এক সমকামী (মূলত রূপান্তরকামী) বন্ধু আছে। সে বলে, ‘আমার বাইরের অবয়বটা পুরুষের কিন্তু ভিতরের উপলব্ধিটা নারীর। ভিতরে একজন নারীত্ব নিয়ে কি করে আরেকজন নারীকে ভালবাসবো। ভিতরের নারী তো একজন পুরুষকেই কামনা করে।’ আমার এই বন্ধুকে এই সমাজ খুবই সন্দেহের চোখে দেখে। তার আত্মীয়রা মনে করে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। তারা ভাবে এসব অনৈতিক, পাগলামি ও বিকৃত চেতনার। আমি কি বলতে পারি, এটা বিকৃত চেতনার? পারি না তো! কিন্তু এ সমাজে সে কিভাবে টিকে থাকবে? তার ভিতরের নারীত্ব আরেকজন পুরুষকেই সে কামনা করে। যদি সেই পুরুষ অবয়বের মানুষটিও ভিতরে নারীত্ব অনুভব করে তবে তারা সুখে দিন কাটাতে পারে।


শিশুদের বলাৎকার করা বা দুজন একই লিঙ্গের ব্যক্তির সাময়িক যৌনক্ষুধা মেটানোকেই আমরা সমকামীতা ধরে নেই। বাস্তবিক সমলিঙ্গের প্রতি তীব্র প্রেম ও আকর্ষণকেই বলে সমকামীতা। কেন একজন পুরুষ একজন নারীর পরিবর্তে আরেকজন পুরুষকেই কামনা করে? এটা কি মানসিক বিকৃতি? নাকি কোন মানসিক রোগ? বন্ধুটির দিকে তাকালেই বুঝবো বাস্তবিক তার কোনটিই নয়। সম্ভবত জিনের গঠনের কারণেই একজন পুরুষ বা নারী সমলিঙ্গের প্রতি প্রেম ও আকর্ষণ বোধ করে। পুরুষকে বলে গে আর নারীকে বলে লেসবিয়ান। অনেকে হরমোনের কথাও বলেন। তবে হরমোন দায়ী হলে এর চিকিৎসা সম্ভব হতো সহজে। এটা কোনভাবেই কোন মানসিক রোগ নয়। বহু স্নায়ু ও মনোবিজ্ঞানীরা এটা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন। সক্রেটিস, লর্ড বায়রণ, দ্বিতীয় এডওয়ার্ড, রোমান সম্রাট হেড্রিয়ান, এলেন গ্রিন্সবাগসহ অসংখ্য মানুষ সমকামী বা উভকামী ছিলেন। বহু সাধারণ গে বা লেসবিয়ানকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তাদের মধ্যে সমলিঙ্গের প্রতি প্রেম বা আকর্ষণ ছাড়া তাদের কোন মানসিক সমস্যা নেই।

তাহলে গে বা লেসবিয়ানদের এই সমস্যার জন্য দায়ী কে? কোনভাবেই তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী নন। জিনের উপর তাদের হাত নেই। এই জিনের কারণে মানুষ ছাড়াও আরও বহু প্রাণির মধ্যেও এ প্রবণতা দেখা যায়। এমন কি ফিতা ক্রিমির মধ্যেও এমন প্রবণতা রয়েছে। ভেড়ার মধ্যে প্রায় ১০ ভাগ ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। মাছ, সরীসৃপ, উভচর বহু প্রাণীর মধ্যেও এমনটা লক্ষ্য করেছেন গবেষকগণ। তারা কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জিন, হরমোন ও পরিবেশগত কারণসমূহের এক জটিল আন্তঃক্রিয়ার সন্ধানই পান। তার মানে এমন আচরণ করার ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছু নেই। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তৈরি না হলে তারা বিয়ে করেও জীবন যাপন করতে পারবে না। সে এক অসম্ভব কষ্টকর জীবন যাপন। যাকে দেখে শরীর কথা বলবে না, তার সাথে তো শারীরিক চাহিদা মেটানোও সম্ভব নয়। অনেকটা একজন সাধারণ পুরুষের সাথে জোর করে আরেকটি পুরুষের বিয়ে দেয়ার মতো হবে। তাহলে?


ইংরেজরা সমকামীতা, উভকামীতা ও পশুকামীতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন করে যায়। ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশুর সাথে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে। বাংলাদেশে এই আইনটি এখনও বলবৎ। পৃথিবীর আরও ৭১টি দেশে সমকামীতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম আইন রয়েছে। কিন্তু ভারতসহ পৃথিবীর বাকি দেশগুলোতে সমকামীতা অপরাধ নয়। ভারতে আইনটির বিরুদ্ধে একজন সমকামী মামলা করলে আদালত আইনটি মানুষের অধিকার পরিপন্থী বিবেচনা করে বাতিল করে। এখন উন্নত দেশগুলো বোঝতে পারছে সমকামীতা শুধু যৌন প্রবৃত্তি দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। সমকামীতা শুধু শরীর সর্বস্বতা নয়। এখানে অনুভূতিটাই প্রধান। এজন্য এখন অনেক দেশে সমকামীদের বিয়েও রেজিস্ট্রি হচ্ছে। অনেক দেশেই তারা জনপ্রতিনিধিও হতে পারছেন। তাদের সামাজিক আন্দোলন শুধু আইনগত দিকেই নয়, মানুষের ভাবাদর্শ বদলাতেও কাজে লাগছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো পশ্চাৎপদ দেশে এই আইন কঠোরভাবেই যেমন প্রয়োগ করা হয় আবার সামাজিকভাবেও তাদের নিগৃত হতে হয়। ঢাকার কলাবাগানে এমন এক জুটিকে মূর্খ মৌলবাদীরা হত্যা করে। তাতে বাংলাদেশের জিনগত কারণে সৃষ্ট এমন মানুষেরা আরও প্রকট সমস্যায় পড়েন। তারা হয় অধিক গোপনীয়তা অবলম্বন করেন নয়তো নিজের শরীরের চাহিদার বিপক্ষে গিয়ে বিপরীত লিঙ্গে বিয়ে করে চরম অসুখী জীবন যাপন করেন।


গত বছর পত্রিকায় দেখলাম, বাংলাদেশের নোয়াখালীর মেয়ে বিলকিস ভালোবাসার টানে টাঙ্গাইলের বাসাইলের মেয়ে আঁখির কাছে ছুটে এসেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে পরস্পরকে খুঁজে পান। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে জানান দু’জনেই। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের উৎসুক বিভিন্ন বয়সি মানুষজন তাদের এক নজর দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি নতুন। আমাদের দেশে সমকামীতা থাকলেও তারা তা গোপনেই রাখেন। সামাজিক মাধ্যম না থাকলে দুই তরুণীর মধ্যে যোগাযোগও হতো না। বিলকিস আক্তার বলেছিলেন, ‘ফেসবুকে তাদের পরিচয় হয়। এরপর দুই বছর হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। তবে তাদের এই সম্পর্ক মানতে পারছে না পরিবার। আমি আঁখিকে ভালোবাসি, তাই ওর কাছে চলে এসেছি। আমার ফ্যামিলিকে বলেছিলাম, ওর কাছে যাব। কিন্তু ওনারা রাজি হয়নি। তারা আমাদের সম্পর্ক মানবে না। তাই বাড়ি থেকে নিরুপায় হয়ে পালিয়ে এসেছি। এখন ওর পরিবার না মানলে আমরা দু’জনে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করব।’ আঁখি আক্তার বলেছিলেন, ‘বিলকিসকে নিয়ে আমি এর আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমরা ঢাকায় দেখা করেছি। ঢাকায় আমাদের ফ্যামিলি গিয়ে আমাদের আলাদা করে নিয়ে এসেছে। আমার ফোন নিয়ে নিয়েছিল। কয়েকদিন পর ফোন ফেরত দেয়। তখন আবার আমরা কন্ট্যাক্ট করে ওকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি। সামাজিকভাবে আমাদের কেউ মানবে না। কিন্তু আমি ওর সঙ্গেই সারাজীবন থাকতে চাই। বাঁচলেও ওর সঙ্গে, মরলেও ওর সঙ্গে। পুলিশ বা তারা যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায়, তাহলে দু’জনকে একসঙ্গেই মারবে। আর যদি বাঁচিয়ে রাখতে চায়, তাহলে দু’জনকেই রাখতে হবে।’ আমাদের মিডিয়া কতিপয় মূর্খ অধ্যাপক ও ডাক্তারের মতামত নিয়েছে। তারা এটাকে বিকৃত যৌনাচার বলে দিয়েছে। তারা বলেছে এটা সাময়িক! কিন্তু এটা সাময়িক নয়। ছবি দেখেই বুঝেছেন এরা দরিদ্র পরিবারের। এরা খাঁটি সমকামী! 

রূপান্তরকামীর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশে পুরোটা নেইও। মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শে প্রথমে হরমোন দিবে ডাক্তার। সেটা কার্যকরী না হলে অপারেশন করে দুজনকেই পুরুষ করে ফেলতে হবে। কারণ তাদের ভেতরটা পুরুষের। পুরুষের হরমোন প্রয়োগে তাদের বাইরের অবয়বও বদলে যাবে। তখন দুজনই দুজন নারীকে বিয়ে করে নিতে পারবেন। বাংলাদেশে টিএমএসএস এর নির্বাহী পরিচালক পুরুষ থেকে নারী হতে পেরেছিলেন। তিনি পরে তার সহপাঠী পুরুষকে বিয়েও করেন। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে।

জোর করে শিশুদের বলাৎকার করাটা ধর্ষণযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দুজন গে বা লেসবিয়ান যদি স্বেচ্ছায় নিজেরা সুখে জীবন যাপন করেন তবে তা কি অপরাধ হয়? জিনের ত্রুটির দায়টা ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দিতে কি মানুষ পারে? এসব প্রশ্নের জবাবটাই বাংলাদেশের আইন পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা এসব বিষয় গোপন করতে চাই এবং কথা বলতে চাই না। ফলে সমস্যা চুপিচুপি বাড়তেই থাকে। সবদেশের আইনই বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে হবে।


দাস মনোবৃত্তি -
মুজিব রহমান
Dec. 3, 2024 | যুক্তিবাদ | views:1042 | likes:36 | share: 1 | comments:0

দরিদ্র দেশের প্রায় সকল মানুষের মধ্যেই একটি দাস মনোবৃত্তি থাকে। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন বা ক্ষমতা থাকে না। এটা অবশ্য আদিকাল থেকেই দেখে আসছি। এথেন্স নগর রাষ্ট্রে অর্ধেকের বেশি ছিল দাস। তারাই ছিল কর্মঠ ও শক্তিশালী। যদি তাদের মধ্যে কেউ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হতো তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও শক্তির জোরে ক্ষমতা অনায়াসেই দখল করে ফেলতে পারতো। রোমান সাম্রাজ্যে আমরা দাসবিদ্রোহ দেখেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই নেতৃত্ব ব্যর্থতার কারণেই চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। ভারতে একটি স্বল্পকালীন দাস রাজবংশ কায়েম হয়েছিল। মোহাম্মদ ঘুরির সেনাপতি ছিলেন দাস- কুতুবউদ্দিন আইবক। ঘুরির কোন সন্তান ছিল না এবং তিনি কয়েকজন দাসকে যুদ্ধে ও শাসনকার্যে পারদর্শী হিসেবে তৈরি করেছিলেন। সে কারণেই আইবক শাসক হতে পেরেছিলেন। মাত্র ৪ বছর শাসনের পরে মৃত্যুবরণ করার পরে শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ ও গিয়াসউদ্দিন বলবনও দাস হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা করেন। ঘুরির উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তিনি দাসদের তৈরি না করলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারতেন না।


অধিকাংশ মানুষেরই নেতা হওয়ার বাসনা থাকে না। ইতিহাসে অনেককে দেখলে মনে হয়, সম্ভবত নেতা হতে চাইলেই হওয়া যায়। এই চাওয়াটা ইচ্ছে করলেইতো হয় না। তার মধ্যে সাহস ও বিচক্ষণতাওতো থাকতে হবে। আবার ক্ষমতা স্পৃহাও গুরুত্বপূর্ণ। আমি নেতা হতে চাই- এমন একটি ভাবাদর্শ তাকে অনেক দূরই এগিয়ে দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা একালে ডুনাল্ড ট্রাম্পকে দেখলাম, নেতা হতে চাইতে। তার রাষ্ট্র চালানোর যোগ্যতা ছিল না, বিচক্ষণতাও ছিল না তেমন কিন্তু স্পৃহাটা ছিল প্রকট। তিনি জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে ঠিকই রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন। অবশ্য এমন নেতৃত্ব সচরাচর ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, সামরিক শক্তির সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। আফগানিস্তানে তালেবান নেতা মোল্লা ওমর ধর্মকে ব্যবহার করে, ভারতের নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে এবং হুমো এরশাদ সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছেন নিজেদের দেশ চালানোর যথেষ্ট যোগ্যতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও। তবে তাদের আমি সাহসীই বলি। যোগ্যতা না থাকার পরেও ক্ষমতালিপ্সা তাদের ক্ষমতার মসনদে পৌঁছে দিয়েছে। বার্ট্রান্ড রাসেল তার ‘ক্ষমতা গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যে সমাজে অভিজাততন্ত্র কিংবা বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের মতো কোনও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই, সেখানে যারা অধিক ক্ষমতালিপ্সু তারাই ক্ষমতা অর্জন করে। সেখানে গড়পড়তা সাধারণ লোকদের চাইতে যাদের ক্ষমতাপ্রীতি বেশি তারাই ক্ষমতা দখল করতে পারে।’ রাসেলের এই পর্যবেক্ষণ আজকের দুনিয়াতেও লেগে যাচ্ছে। সাহসী মানুষের মধ্যে ক্ষমতাস্পৃহাকে বাড়িয়ে দেয়।

আমরা চেঙ্গিস খান বা কয়েকজন সফল ধর্মপ্রচারকের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই তারা ক্ষমতা দখলের জন্য কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই না করেছেন। তারা বিভিন্ন বাধাকে অতিক্রম করেছেন এবং দৃঢ়ভাবেই নিজেকে টিকেই রেখেছেন প্রতিকূলতায় এবং চাওয়াটাকে সফলতার দিকেই নিয়ে গিয়েছেন। এর বিপরীতে সাধারণ মানুষের একটা মনোভাব রয়েছে। তারা সাতপাঁচে যেতে চায় না। হাঙ্গামা এড়িয়ে চলতে চায়। স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপদে রাখতে পারলেই সুখবোধ করেন। তারা ক্ষমতায় যেতে চায় না আবার কাউকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতেও প্রচেষ্টা চালায় না। তারা আশায় থাকে কেউ এসে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিবে। কিন্তু সমাজে দাস মনোবৃত্তি অধিক হলে, নতুনরা ক্ষমতায় এসেই পুরাতনের মতোই আচরণ করে। সে দেখতে চায় চারদিকে অসংখ্য অনুগত মানুষ। তাঁর আঙুল উত্তোলনে মানুষও উত্তোলিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে মানুষকে উদ্বেলিত হতে দেখেছি। 'পারফিউম' নামের একটি সিনেমা দেখেছিলাম। অসাধারণ সিনেমা। সেখানে নায়ক একটি স্পেশাল পারফিউম শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। সেই পারফিউমের আকর্ষণে মানুষ পাগল হয়ে উঠে। পারফিউম লাগিয়ে রুমাল দুলিয়ে মানুষকেও দোলাতে থাকেন। একসময় নিজের মাথায় সেই পারফিউম ঢেলে দেন। মানুষ তাকে সাবাড় করে দেয়। দাস মনোবৃত্তিটা এমন যে, সেখানে দাসরা নেতার প্রতি প্রচণ্ড আস্থা প্রদর্শন করে। নেতাই যেন সব। তার বিজয় মানে নিজের বিজয়। তার দোষের বিপরীতে নিজেই একটা অজুহাত দাঁড় করিয়ে নেয়। নেতার প্রতি তীব্রভাবেই অনুগত থাকে। মনে হবে, ‘নেতৃত্বের জাদু’, বাস্তবিক ঘটনা হল- দাস মনোবৃত্তির ফল এটা। কিছু মানুষ সর্বোচ্চ নেতার পেছনে হাঁটতেই পছন্দ করে কিন্তু কোন ভাবেই নেতা হতে চায় না। নেতাদের কাছেও তারা খুবই উপাদেয় খাদ্য। তারা খাদ্য হয়ে যাবে তবুও নেতার প্রতি আস্থা হারাবে না। এমনটা আমরা ওয়াজের বক্তার ক্ষেত্রেও দেখি। তাদের অনুরাগীরা নিজের স্ত্রী, কন্যাকেও দিতে পারে। বক্তা মামুনুল হকের ক্ষেত্রেও দেখলাম, তার দুই মুরিদই নিজের সুন্দরী স্ত্রীকে প্রিয় হুজুরের জন্য ত্যাগ করেছে। কিন্তু তাদের মনে একবারের 

জন্যও প্রশ্ন জাগবে না, ‘হুজুর তার জন্য কি ত্যাগ করবে?’


এ ভূখণ্ডে স্বাধীনতা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন ইত্যাদি কোন ক্ষেত্রেই আপনি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দেখেননি। একইভাবে একসময় ভারতজুড়ে ছিল বৌদ্ধ বিহার। সেখানে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হতো। যখন বৌদ্ধ পাল শাসনের অবসান হচ্ছিল, বিভিন্ন বিহার দখলে নিচ্ছিল সেনরা তখন আমরা কোথাও প্রতিরোধ দেখিনি। আমরা গীর্জা, মন্দির প্যাগোডারও কোন প্রতিরোধ দেখিনি। সোমনাথ মন্দিরে ১৭ বার হানা দিয়ে লুণ্ঠন করে সুলতান মাহমুদ আর ১৭ জন অশ্বারোহী নিয়ে বখতিয়ার খলজি দখলে নেয় লক্ষণ সেনের রাজত্ব! কারণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ করে অন্যের গলগ্রহ হয়ে। তাদের মধ্যে একটি দাসমনোবৃত্তি কাজ করে। হেফাজতের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি আমরা দেখলাম। একটা দৃশ্য সবাই দেখেছেন যে, তালবেলামরা কান ধরে সারিবদ্ধভাবে মতিঝিল ছেড়ে যাচ্ছে। ভেড়ারপালের সাথে মিল করতে পারবেন। হাজার হাজার ভেড়ার পালে একটি নেকড়ে অনায়াসেই ঢুকে একটি ভেড়াকে খেয়ে ফেলতে পারে। ভেড়ার মধ্যে রয়েছে দাসমনোবৃত্তি আর নেকড়ের মধ্যে সাহস। ভেড়ার মোট শক্তি বিশাল কিন্তু তারা পারে না। কতজন ব্রিটিশ ৩০ কোটি ভারতবাসীকে শাসন করতো? ভারতে অনায়াসেই আর্যরা ঢুকে যায় এবং তাদের দেবদেবীদের চাপিয়ে দেয়। বহিরাগত মুসলিমরাও অল্পই ছিল কিন্তু তারাও শুধু ক্ষমতাই দখল করেনি, দাসমনোবৃত্তির ভারতবাসীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে মুসলিম বানিয়ে ফেলে। স্থানীয় ধর্ম আর ভারতে বলিষ্ঠভাবে নেই। বৈদিক ও ইসলাম ধর্ম দুটিই বহিরাগত ধর্ম। পুরো ভারত ছিল কৃষি নির্ভর- জালিক আর হালিক; মানে জেলে আর হালচাষি! আর্য ও বহিরাগত মুসলিমরা ছিল যোদ্ধা। যেন ভেড়ার পালের উপর নেকড়ের হামলে পড়ার মতো ঘটনা ঘটলো!


আজকেও আমরা দেখি এদেশে একজন নেতার পেছনে শতে শতে লোক হাঁটে। কেউ কখনো একপেট খেতে পারে বা চা-বিস্কিটেই খুশি থাকে। নেতা এক পেট খেতে দিলে বিরাট কিছু। এই প্রবণতাটা আমরা পাশ্চাত্যে দেখি না। তারাও দলকে সমর্থন করে কিন্তু নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়-রোজগার ছেড়ে দিয়ে নেতার পেছনে পড়ে থাকে না। তারা ভোট দিতে আসে। আর নেতাকে লিফলেট নিয়ে দৌড়াতে বা পাড়ার মোড়ে হ্যান্ড মাইকে একা একা কথা বলতে দেখা যায়। আর আমাদের দেশে নেতা আসবেন বলেছেন সকাল ১০ টায়। ভেড়ার পাল কিন্তু অপেক্ষা করে থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত। 

 দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই দেখবেন, প্রত্যেক নেতার সন্তানরাই কোটি কোটি টাকার মালিক। ইউটিউবে সার্চ দিন দেশের সেরা ১০ ধনী। এরমধ্যে নেতাদের ছেলেদের পেয়ে যাবেন যারা কিছু না করেও হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশের কোন মানুষই কিন্তু প্রশ্ন করে না, ‘তিনি এতো টাকার মালিক কি করে হলেন? তার তো কোন কাজকর্ম নেই?’ দাস মনোবৃত্তির মানুষ এটা ভাবতেও পারে না। তারা খুশি হয় যে, তার নেতা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সেই টাকাও দেশে নেই। তাদের পাচার করার কারণেই দেশের মানুষ উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও সুফলটা পায় না। এতো মানুষ নামমাত্র বেতনে গার্মেন্টে কাজ করে বা স্ত্রী-পরিজন ছেড়ে ঊষর মরুভূমিতে পড়ে থেকে অর্থ উপার্জন করে শেষ পর্যন্ত সুখের মুখ দেখে না। বহু প্রবাসীই তার সম্পদ হারিয়ে ফেলে কতিপয় দস্যুর কাছে।


দাস মনোবৃত্তি আত্মসম্মান নষ্ট করে দেয়। তাদের মধ্যে কর্মের স্পৃহাও নষ্ট করে। মানবাধিকার পাওয়ার দাবিও করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। দিনের পর দিন ভোট না দিতে পারলেও কোন ক্ষোভ তৈরি হয় না। এদেশে দুর্ভিক্ষে প্রচুর লোক মারা যেতো। দেখা যেতো তখনও জমিদারদের গোলা ভরা ধান ছিল। কিন্তু সেই ধান ছিনিয়ে নেয়ার সাহস হতো না। ছিয়াত্তরের (১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ) দুর্ভিক্ষের আগে বাংলার মানুষ ছিল ৩ কোটি। দুর্ভিক্ষের পরে বেঁচে ছিল ২ কোটি মানুষ। মানে হল, এক কোটি মানুষ না খেয়ে মারা গেল! কিন্তু জমিদারদের গোলা লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটেনি। খাদ্যের সুষম বন্টন হলে সবাই বেঁচে থাকতে পারতো। পঞ্চাশের (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ) দুর্ভিক্ষে ব্রিটিশ সরকার জাপানিদের ভয়ে খাদ্য প্রত্যাহার করে নিলেও বাংলায় মোট খাদ্যের যে মজুদ ছিল তাতে ৩০ লক্ষ মানুষকে না খেয়ে মরার কথা নয়। তখনও বাজারগুলোতেও মজুদদারদের কাছে প্রচুর চাল ছিল। কিন্তু মানুষের কাছে টাকা ছিল না। ভুখা-নাঙ্গা মানুষ হাত পাততো কিন্তু খাবার ছিনিয়ে নিতে পারতো না। দলে দলে লোক একটু খাবারের জন্য হাত পেতে থাকতো কিন্তু পেতো না। আতঙ্কে ধনিরা আরো মজুদ করে ফেলেছিল। বিহার থেকেও হাজার হাজার অভূক্ত মানুষ এসেছিল কলকাতায়। জমিদারগণ এটো ফেললে তা খেতে ঝাপিয়ে পড়তো। মানুষে কুকুরে লড়াই চলতো ডাস্টবিনে। কিন্তু ছিনিয়ে নেয়ার স্পৃহা, নেতা হওয়ার স্পৃহা কিংবা বেঁচে থাকার স্পৃহা তাদের মধ্যে ছিল না। এখনো দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ মানুষকে সেই দাস মনোবৃত্তিরই মনে হয়।

২৭ ফেব্রুয়ারিকে আমরা ভুলিনি! -
মুজিব রহমান
Nov. 27, 2024 | মুক্তমনা | views:7886 | likes:0 | share: 0 | comments:0

২০০৪ সালের বই মেলার একটি বিষয় হুমায়ুন আজাদ লক্ষ্য করেন এবং আগামী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী ওসমান গণিকে জিজ্ঞাসা করেন, মৌলবীরা এবারের মেলায় আমাদের স্টলে এতো ভিড় করছে কেনো? বিষয়টি তাঁর চোখে পড়েছিল মেলার শুরু থেকেই। ইউনিভার্সিটিতে তার রুমে শুকনো হাড় পেয়েছিলেন বইমেলা চলাকালেই। তখন ওটাকে খুব গুরুত্ব দেননি। আসলে এটা ছিল সিম্বলিক। কিন্তু তাকে হত্যা করার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে এটা কখনো ভাবেননি। ২৭ ফেব্রুয়ারী ০৪ হুমায়ুন আজাদ অন্য দিনের মতো বইমেলার আগামীর স্টলে বসেছিলেন। স্টল থেকে তিনি বের হন সম্ভবত রাত ৯টার দিকে। তারপর হাঁটেন, কয়েকজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। লেখক চত্বরে রফিক আজাদ ও মোহন রায়হানসহ কয়েকজন লেখক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে বসতে বলেন। তিনি তাঁদের সঙ্গে বসেন, একটু সিগারেট খান। সেখানে ছবি তোলা হয়। তারপর আমি যাব বলে বের হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তাটি পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর তাঁর কিছু মনে নেই। 

আক্রমন করেই ঘাতকরা বোমা ফাটিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রথমে তাকে পুলিশ ও উৎসাহী জনতা ঘিরে রাখে। উপুর হয়ে থাকায় কেউ চিনতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সদস্য হাসান শরীফ মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা রক্তাক্ত হুমায়ুন আজাদকে তোলেন। তিনি চিনতে পারেন হুমায়ুন আজাদকে। রক্তে ভেজা মুখ দেখে চিৎকার করে উঠেন। স্যারের এক পাশের গাল দুই ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গিয়েছিল। পুরো মুখটা হা হয়েছিল। তিনি দু'পাশে চাপ দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন। তারা হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রিক্সায় উঠানোর চেষ্টা করেন। সম্ভব না হওয়াতে গাড়ির চেষ্টা করেন। কেউ রাজি হয়নি। এরপর পুলিশের ট্রাকে করেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ট্রাকে উঠানোর আগে হাসান শরীফের সিনিয়র বন্ধু জনাব বিটু ট্রাকে ওঠেন। ওঠানোর আগে সাংবাদিক জনাব পাভেল ছবি তোলেন। সেই ছবিই পরদিন পত্রিকায় আসে। হুমায়ুন আজাদের পাশেই ছিলেন হাসান শরীফ; পত্রিকায় তার ছবিও আসে। এ নিয়ে তিনি ভোগান্তির মধ্যেও পড়েন। ট্রাকে ওঠালে স্যার জিজ্ঞাসা করেন, বাবা আমাকে কই নিয়ে যাও? হাসান শরীফ বলেন, হাসপাতালে। স্যার বলেন, আমার চশমা কই? হাসান শরীফ বলে, স্যার আছে। স্যার বলে, আমি পুলিশের গাড়িতে যাব না। হাসান শরীফ বলেন, ঠিক আছে স্যার আমরা নেমে যাব এখুনি। হাসান শরীফ তার ব্লগে লিখেছেন, আহত রক্তাক্ত অবস্থায় আমি কোনও মানুষকে এত শক্ত থাকতে দেখিনি। অন্য কেউ হলে এত ব্যাথা নিয়ে চিৎকার করত। ভয় পেত, কিন্তু স্যার খুব শক্ত দৃঢ় চিত্তে বসে আছেন যেন কেউ কোনও ভুল করেছে। কেউ যেন ভুল করে তাকে কুপিয়ে গেছে। ট্রাক ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের সামনে গিয়ে থামে। তারা স্যারকে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলেন। আক্রান্ত হওয়ার পরে পার হয়েছে মাত্র ১১ মিনিট। তারা ৫ টাকা দিয়ে স্লিপ কাটলেন। ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে চিকিৎসক স্লিপ চাইলেন। সেটা ততক্ষণে রক্তে ভিজে গিয়েছিল। ডাক্তার আবারও স্লিপ আনতে বললে তারা আবারও স্লিপ আনেন। শুরু হয় হুমায়ুন আজাদের চিকিৎসা।

হুমায়ুন আজাদের তারপরও যা মনে পড়েছে তা হল তিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর মেয়ে স্মিতা আজাদকে দেখে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা এখানে এলে কী করে? তার আগে তাঁর পকেট থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ও হাতঘড়ি তাকে দেন। এরপর আর কিছু তাঁর মনে নেই। পরে যখন তিনি জেগে উঠেন তখন ৩ মার্চ। মাঝখানের সময় তাঁর কিছু মনে নেই। বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর তাঁর সম্ভবত তখন খুবই প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়েছিল। বাংলা একাডেমিতে লেখকদের জন্য এর আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেই বলে সম্ভবত রাস্তা পেরিয়ে ওই পাশে গিয়ে প্রস্রাব করেন। তারপরে পূর্ব দিকের ফুটপাত ধরে তিনি এগোতে থাকেন। সম্ভবত যখন তিনি অটোমিক এনার্জির বিপরীত দিকে আসেন তখন মৌলবাদী অপশক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী শায়খ আঃ রহমানের ছোট ভাই আতাউর রহমান সানীর নেতৃত্বে কয়েকজন উগ্র মৌলবাদী তাঁকে আক্রমণ করে। কিন্তু এসব কিছুই তাঁর মনে নেই। এ অংশে তিনি সম্পূর্ণ স্মৃতিভ্রষ্ট। তাঁর তখন মনে পড়েছিল যে, তিনি চিৎকার শুনছেন ছাত্রদের, তারা বলছে: হুমায়ুন আজাদ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর- পুলিশ; তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, তাঁকে একটি কাটা পাঙ্গাস মাছের মতো টেনে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে।

তিনি আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হওয়ার পরেও ঐ দৃশ্যের কথা মনে করতে পারেননি। যারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা তাকে প্রথমে গলার দিক থেকে কেটে ফেলতে চেয়েছিল; না-পেরে তারা মুখের উপর ঘা দিয়েছিল, এবং তারপরেও না-পেরে হয়তো মাথায় ঘা দিয়েছে এবং তিনি তো অদম্য মানুষ— সেজন্যই হয়তো তারা সম্পূর্ণ সফল হতে পারেনি; এবং খুব অবাক ব্যাপার যে, তার হাত কাটেনি কিন্তু বাহুর অংশ কেটেছে। বই মেলা থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন দুটো করে বই নিয়ে আসতেন। তিনি হয়তো সেই বই নিয়ে ফিরছিলেন, ফলে তাঁর হাত কাটেনি কিন্তু বাহুতে তারা আক্রমণ করতে পেরেছে। পত্রিকায় যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে রক্তাক্ত; ঝরঝর করে তাঁর মুখমন্ডল থেকে রক্ত পড়ছে এবং নিজের চিবুক নিজে চেপে ধরে আছেন: তিনি তখন হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর চিবুক-মুখমন্ডল শরীর থেকে খসে পড়ছে। 

দ্রুতই খবর রটে যায়। আগামী প্রকাশনীর সত্তাধিকারী ওসমান গণি খবর পেয়ে হুমায়ুন আজাদের স্ত্রীকে খবর দেন। সেখান থেকে খবর পান আরেক ভাই সাজ্জাদ কবীর বাদল। তাঁর কাছ থেকে খবর পান ছোট ভাই মঞ্জুর কবীর মাতিন। তবে কি ঘটেছে তখনো তাদের কাছে ছিল অজানা। ছোট ভাই জেনেছে তিনি বই মেলায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি রিক্সা নিয়ে মোহাম্মদপুরে তার ঔষধের দোকান থেকে ওদিকেই যাচ্ছিলেন। কাঁটাবন এলাকায় এসে খবর পান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা করছে। হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী, দুই কন্যা ও পুত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। ডাক্তার ঔষধের একটি ফর্দ ধরিয়ে দেয় তাঁর বড় মেয়ে মৌলির হাতে। সেটা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে থাকেন ঔষধের সন্ধনে। সামনে দেখতে পান ছোট কাকা মাতিনকে। তিনি কয়েক দোকান খুঁজে ঔষধ কেনার সময় লোকজনের কথাবার্তায় বুঝতে পারেন হুমায়ুন আজাদকে কোপানো হয়েছে। দ্রুত ফিরতেই দেখেন অ্যাম্বুলেন্স হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে যাচ্ছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের দিকে। হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী লতিফা কহিনুর তাকে ঐ অ্যাম্বুলেন্সে উঠে পড়তে বলেন। একই অ্যাম্বুলেন্সে উঠেন হুমায়ুন আজাদের ফোলার রোডের বাসার দাড়োয়ান। মাতিন নিজের কোলে আজাদকে শুইয়ে দেন। তিনি কথা বলতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী সন্তানদের কথা জিজ্ঞাসা করেন। একসময় তিনি মাথার নিচে দেয়ার জন্য একটি বালিশ চান। দাড়োয়ান তাঁর মোটা শার্টটি খুলে দেয়। হুমায়ুন আজাদের মাথার ব্যান্ডেজ ভিজে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁর মুখ দিয়েও রক্ত বের হচ্ছিল। ডাক্তার মাতিনকে হাত দিয়ে রক্ত মুখ থেকে বের করে দিতে বলেন, যাতে রক্ত মুখের ভিতরে না যায়। তিনি তাই করতে থাকেন। জাহাঙ্গীর গেইট পর্যন্ত হুমায়ুন আজাদের জ্ঞান থাকে। এর পর তিনি জ্ঞান হারান। 

সিএমএইচে ডাক্তাররা রক্ত চান রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ। রক্ত দেওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ সম্মতি জানায়। এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিক, রিক্সা চালকরাও রক্ত দিতে চান। রাত জেগে থাকেন পরিবারের লোকেরা। তারা ভয়ে থাকেন ও আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাতে হুমায়ুন আজাদের লাশ সরিয়ে ফেলতে পারে কর্তৃপক্ষ। ডাক্তাররা জানান ঔষধপত্র কিনে আনতে হবে নিজেদের। পরে একসাথে বিল পরিশোধ করবেন। পরদিন তাদের জানানো হয়, বিল সরকার দেবে। হুমায়ুন আজাদের বড় বোনের বড় ছেলে পিজির সার্জন। তিনি অনুমতি নিয়ে ওটিতে থাকেন। তার কাছ থেকে খবর পেতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি আশ্বস্ত করেন হুমায়ুন আজাদ সুস্থ হয়ে উঠছেন। দীর্ঘ-অপারেশন শুরু হয়। ভোর রাতের দিকে অপারেশন শেষ হয়। বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে তিনি বেঁচে উঠবেন কি না। পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘতম রাতটি অতিবাহিত হয় হাসপাতালে। 

তাঁর আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রচারের সাথে সাথেই তাঁর অনুরাগী ও মুক্তচিন্তার মানুষেরা উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। তারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের উপর ব্যাপক চাপ প্রদান করেন। সরকার বাধ্য হয় তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। পরদিন ভারতীয় টিভি চ্যানেল ‘তারা বাংলা’ একটি ভুল খবর প্রচার করে যে, ড. হুমায়ুন আজাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। খবরটি মুহূর্তের মধ্যেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আবার বাংলাদেশের মিডিয়া সঠিক সংবাদ পরিবেশন করায় বিভ্রান্তি কেটেও যায়।

তাঁকে মৃত্যু থেকে ফিরিয়ে এনেছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কিন্তু সেখানে তাঁর দেহটিকে নানাভাবে বিকৃত করা হয়েছে- তাঁর মুখমণ্ডলে কোনো দাঁত ছিল না, ঠিক মতো খেতে পারতেন না, এবং তার শরীরের ভেতরে আরও অনেক ব্যধি এই আক্রমণের ফলে জন্ম নিয়েছিল। তাঁর বাঁদিকের যে স্নায়ু রয়েছে সেগুলো নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল, সেগুলো তাঁর মাংসকে এবং অন্যান্য জিনিসকে টানত না; ফলে তাঁর মুখটি বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। তিনি উপরের দিকে তাকাতে পারতেন না- মাথা ঘুরতে থাকত- বালিশে শুতে গেলে মাথা ঘুরতো, মাথা তুলতে গেলেও মাথা ঘুরত। খুব স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না। সামরিক হাসপাতাল তাঁর চিবুকের ভিতরে ধাতব পাত ঢুকিয়ে দিয়ে এটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে, তাঁর মুখের ভেতরে তারা তিনটির মতো স্ক্রু লাগিয়েছিল জোড়া দেওয়ার জন্য; মাথায় অন্তত ৫০ টি সেলাই ছিল। তাঁর ঘাড়ের পেছনে একটি বেশ বড় গভীর ক্ষত ছিল। জীবন তো তাঁর ফিরে পেয়েছিলেন কিন্তু অনেক সমস্যা রয়ে গিয়েছিল। তাঁর বাঁ চোখ দিয়ে সব সময় পানি ঝরতো। তাঁর বাঁ দিকের দুপাটি দাঁতই পড়ে গিয়েছিল। স্থায়ীভাবে দাঁত বাঁধানোর জন্য এক বছর লাগত, কিংবা খোলা ও লাগানো যায় এমন দাঁতের জন্য লাগত চার মাস। বা গালে সিএমএইচ এ যে তিনটি অস্ত্রোপাচার হয়েছে তার তিনটির গভীর দাগ রয়েছিল। সেগুলো ৬ মাসের আগে অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব ছিল না। 

হুমায়ুন আজাদকে ব্যাংককের বুমরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২২ মার্চ ০৪ তারিখে। সাথে যান আগামী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী ওসমান গণি এবং হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মঞ্জুর কবীর মাতিন। কয়েকদিন পরে ওসমান গণি ফিরে আসেন দেশে। মাতিন থাকেন শেষ পর্যন্ত। সিএমএইচ তাঁকে বাঁচিয়ে তুললেও তিনি অধিকতর সুস্থ হয়ে উঠেন বুমরুনগ্রাদ হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তার, নার্স তাঁর বিশেষ যত্ন নিয়েছে। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপরেও তাঁর গালে বড় গভীর দাগ সেসব ঠিক করতে হলে তাঁকে ছয় মাস পরে আবার যেতে হত ব্যাংকক। তারপরে রয়েছে প্লাস্টিক সার্জারী। ব্যাংকক থেকে দাঁত লাগাতে অনেক খরচের কথা চিন্তা করে পরবর্তীতে ঢাকাতেই নিজস্ব চিকিৎসকের কাছ থেকে দাঁত বাঁধান।

ব্যাংকক থেকে ২০ এপ্রিল ০৪ দেশে ফেরার পরে মানবাধিকার ও লেখকের স্বাধীনতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, আমি ছেলেবেলায় একটি বাংলা ব্যাকরণ পড়েছি। সেখানে গোপাল নামে একটি অসাধারণ চরিত্র ছিল। সেই ব্যাকরণটি জানিয়েছে, গোপাল কলা খায়। গোপাল অন্য কিছু খায় না, শুধু কলা খায়। সুশীল বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝি একটি দুর্বল মানুষ। ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। সুন্দর ইস্ত্রি করা পোশাক পরে, মাথায় প্রচুর পরিমাণে তেল দেয় এবং মাঝখানে সিঁথি কাটে- এই ধরনের একটি মানুষ। এই সুশীল সমাজকে দিয়ে আসলে কোনও কাজ হবে না। আমাদের জন্য আসলে অশীল সমাজ প্রয়োজন। যে অশীল সমাজ চিরকাল সমাজকে রূপান্তরিত করেছে, যে শব্দগুচ্ছের বাংলা অনুবাদ সুশীল সমাজ তা হচ্ছে সিভিল সোসাইটি। বাংলাদেশে এর একটি সর্বজনগ্রাহ্য বাংলা রূপ থাকা দরকার। সামরিক সমাজের বিপরীত হচ্ছে সিভিল সমাজ। আমি এক্ষেত্রে যে বাংলা শব্দটি প্রস্তাব করতে চাই তা হতে পারে জনসমাজ। বাংলাদেশে মানবাধিকার আছে কি না সেটা বোধ হয় খুব বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। একটি বাক্য যথেষ্ট যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। দেশে ফিরে পূর্বের মতোই সাহসী ছিলেন।

'মৃত্যু থেকে কয়েক সেকেণ্ড দূরে' নামে বই লেখা বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ বের হলে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন, বইটির নাম হবে 'মৃত্যু থেকে এক সেকেন্ড দূরে'। তিনি বলেছিলেন, মে মাসের মাঝামাঝি আমি আবার লিখতে শুরু করবো। বিষয়বস্তু হবে আমার মৃত্যু অভিজ্ঞতা। জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। মৃত্যু হচ্ছে অভিজ্ঞতাহীন একটি ব্যাপার। হামলাকারীদের শাস্তির ব্যাপারে বলেছেন, আমি বিন্দুমাত্র আশাবাদী নই। কারণ বাংলাদেশ অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয় না। সাঈদীকে ধরতে হবে, মৌলবাদীদের ধরতে হবে তারাই আসলে আমার খুনি।

জুলাই মাসের ২ তারিখ; আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রথমবার এবং শেষবার নিজ গ্রামে আসেন। তাঁকে প্রথমে বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের তরুণ অনুরাগীদের পক্ষ থেকে এবং বিকেলে 'আমরা রাড়িখাল বাসী'র পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি তাঁর অনুরাগীদের প্রথা ভাঙ্গার আহবান জানান। এখানেও বোঝা যায় আক্রমণ তাকে শারীরিকভাবে কাবু করলেও মানসিকভাবে তিনি ছিলেন আগের হুমায়ুন আজাদ। এরপর শুধু সমাধিস্থ হতে রাড়িখাল আসেন। চিরনিদ্রায় শায়িত আছে পৈতৃক ভিটায়। বর্তমানে পাক সাদ জমিন সাদবাদ উপন্যাসের প্রচ্ছদ আঁকা হয়েছে সমাধিতে, যা জ্যোতির্ময় আঙিনা নামে পরিচিত। 

২৪ জুলাই তাঁর একমাত্র পুত্র অনন্য আজাদকে অপহরণের চেষ্টা করে ঘাতকেরা, ২৫ জুলাই বিকালে টেলিফোনে বোমার ভয় দেখিয়ে তাদের আতঙ্কিত করে তোলে। এর প্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই ০৪ বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও দেশবাসীর কাছে খোলা চিঠি লেখেন। শেষ করেন এভাবে, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও দেশবাসী, এ সঙ্কট মুহূর্তে, বিপন্নতার সময়ে আমার পরিবারের ও আমার জীবন আমি আপনাদের হাতে সমর্পণ করলাম; আপনারাই স্থির করবেন বাংলাদেশের রক্তের বন্যায় কি বিনিদ্র কাঁপতে থাকবো, এবং বিশ্ব শিউরে উঠবে বাংলাদেশকে দেখে, সময় বেশি নেই, এখনই আপনাদের কর্তব্য স্থির করার জন্য আবেদন জানাই।

তিনি ব্যাংকক থেকে ফিরে বলেছিলেন, আমি লিখবো, লেখাই হচ্ছে আমার জীবন, লেখাই হচ্ছে আমার আনন্দ। আমি যদি আরও ৩০ বছর বেঁচে থাকি, এবং তাহলে হয়তো আরো অন্তত ৬০ টি বই লিখবো, এবং এগুলো বিচিত্র ধরনের হবে; তাতে বক্তব্য বা কাহিনী বা আবেগ বহুরূপে প্রকাশ পাবে এবং সেগুলো বাঙালিকে বিকশিত করবে। আমার কাজ কল্যাণে এসেছে, এবং আরো বহু বছর কল্যাণে আসবে।

তিনি তাঁর নিজ ভাষা এবং দেশকেই প্রচণ্ডভাবে ভালবাসাতেন। তিনি উদ্বাস্তু হয়ে দেশে দেশে ঘুরতে চাননি। তিনি বলেছিলেন, আমি চাই না দেশ ছেড়ে চলে যাবো, এবং বিদেশে একজন অত্যন্ত পুরস্কৃত সম্মানিত উদ্বাস্তু লেখক হিসেবে বাঁচতে চাই না। আমি বাঁচব আমার নিজের দেশে, এবং বাংলাদেশে এবং এমন একটি বাংলাদেশ আমি চাই- যে বাংলাদেশ আলবদরমুক্ত, রাজাকারমুক্ত, মৌলবাদমুক্ত।

আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন এর আমন্ত্রণে বিশ্বখ্যাত কবি হাইনরিশ হাইনের উপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান ৭ আগস্ট। পরিবারের লোকেরা এবং অনুরাগীরা কেউ তাকে একা যেতে দিতে চান নি। কিন্তু তিনি একাই যান। এর মাত্র ৫ দিন পর ১২ আগস্ট মিউনিখস্থ নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি চেয়েছিলেন ৩০ বছরের আরেকটি জীবন, দ্বিতীয় জীবন। তাঁর ইচ্ছাটা শরীর গ্রহণ করতে পারেনি। তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ১৬২ দিন। আজও তার অনুরাগীরা তাঁকে সমানভাবে উপলব্ধি করে। তিনি নেই এটা আজ বড় বেশি অনুভব হয়।

বিশ্বাস ও বিজ্ঞান এক নয় -
মুজিব রহমান
Nov. 24, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:291 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আদম ও হাওয়ার গন্ধম খাওয়া নিয়ে তাদের কথোপকথনের কথা বলছিলাম ধর্ম পড়াতে গিয়ে। এক ছাত্রী বলল, ‘স্যার গতকাল আপনি সমাজ পড়াতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আদিম মানুষ কথা বলতে পারতো না’, আজ ধর্ম পড়াতে গিয়ে বলছেন, ‘আদম হাওয়া কথা বলছে’। 

আমি শুধু বলেছিলাম, ধর্ম পড়ার সময় বিশ্বাস নিয়ে পড়বে আর বিজ্ঞান পড়ার সময় যুক্তি-প্রমাণসহ পড়বে।

বাংলায় শব্দদুটির মধ্যে অনেক মিল। দুটোই ‘বি’ দিয়ে শুরু এর পর একটি যুক্তাক্ষর সাথে ‘আ’ কার এবং শেষে একটি অক্ষর। অথচ এরা বিপরীত মেরুর। নিউটন ও আইনস্টাইনের কোন সূত্রে বিশ্বাস স্থাপন করার সুযোগ নেই। প্রমাণ ছাড়া সূত্র টিকবে না। যখনই ভুল প্রমাণ হবে সাথে সাথেই বাতিল। অনেকেই ধর্মগ্রন্থের সাথে বিজ্ঞান মিলাচ্ছেন। অনেকে বলেন- বিশ্বাস ছাড়া বিজ্ঞান অন্ধ! তারা না জেনে, না বুঝেই অথবা প্রতারণামূলকভাবে এসব বলছেন। মাত্র তিনটি পার্থক্য তুলে ধরছি -

১। বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, পৃথিবী গোলাকার। চন্দ্র পৃথিবীর চার দিকে আর পৃথিবী-চন্দ্র মিলে সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয়। মহাবিশ্বে কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে যা সম্প্রসারণশীল। ধর্মগ্রন্থে বলা হচ্ছে, পৃথিবী সমতল। স্থলভাগের পরে রয়েছে অফুরন্ত জলরাশি। সকালে ফেরেস্তারা সূর্যকে টেনে পূর্ব দিগন্ত থেকে পশ্চিমে টেনে নিয়ে যায়। কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়। রাতে সূর্য আরশের নিচে বসে জিকির করে। চন্দ্র ও সূর্যের জন্য নির্দিষ্ট পথ করা হয়েছে যাতে একটি আরেকটিকে অতিক্রম করতে না পারে। তারকামণ্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য।


২। বিজ্ঞানে এখন বলা হয়েছে, সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। ‘বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান মানুষের প্রজাতি তিন লক্ষ বছর আগে এসেছে। বাইবেল বিশ্লেষণ করে, পাদ্রিরা বলছেন, যিশুর জন্মের ৪ হাজার বছর আগে ঈশ্বর এডাম ও ইভকে তৈরি করেছেন। অন্য ধর্মে বিভিন্ন নবী ও ধর্মপ্রচারকদের আয়ুষ্কাল বিশ্লেষণ করে কাছাকাছি পৌঁছানো গেলেও হিসাব মেলানো যায় না। ছয় দিনে মহাবিশ্ব, পৃথিবী, গাছ-পালা, পশু-পাখি ও মানুষ সৃষ্টি হয়েছে।

৩। বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, মানুষ কোষ দ্বারা তৈরি। কোষের সম্মিলিত শক্তিই তাকে চালিত করে। শরীরে আত্মা, রুহু বলতে কিছু নেই। ধর্মগ্রন্থগুলো বলছে, ঈশ্বর আত্মা বা রুহু সৃষ্টি করে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। আত্মা বা রুহু অবিনশ্বর। মৃত্যু মানে শরীর থেকে রুহু বা আত্মা বের হয়ে যাওয়া। শরীর মাটি দিয়ে তৈরি। 

যার ধর্ম তার তার কাছে, বিশ্বাসও যার যার তার তার। অসুবিধা কি? চলুক। কিন্তু দুটোকেই এক করতে গেলে কিছু সমস্যা তৈরি হবে। যারা লেখাপড়া শিখে একটু সচেতন হবেন, যারা বিজ্ঞান বুঝবেন তাদেরকে যখন বলবেন ধর্মগ্রন্থ থেকেই বিজ্ঞান গ্রন্থের উৎপত্তি হয়েছে আর বিশ্বাসই বিজ্ঞান তখন সে লোক কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেলবে। আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করবে। 

বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক রয়েছে? বাস্তবিক কোন সম্পর্ক থাকার সুযোগ নেই। দুটি দুই মেরুর। একটির বিপরীতে আরেকটি। বিজ্ঞান সত্য ও যুক্তিনিষ্ঠ আর বিশ্বাস অলৌকিকতা নির্ভর। একজন যুক্তিবাদী মুক্তচিন্তার বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ বিশ্বাস নির্ভর হয় না। তাহলে মানুষ কেন বিজ্ঞানমনষ্ক হয় না? জন্মের পরেই মানুষ মুক্ত না হয়ে পারিবারিক ফাঁদে পড়ে যায়। যে পরিবারে যার জন্ম সে ওই পরিবারের ভাবাদর্শেই বড় হয়। সাধারণত একজন হিন্দুর সন্তান ধারাবাহিকভাবেই হিন্দু থাকে, মুসলিমের সন্তান ধারাবাহিকভাবে মুসলিম থাকে। পরিবার থেকে তারা শিখে - এগুলোই সত্য, সঠিক এবং এগুলো অবিশ্বাস করা মহা অপরাধ। পরিবার থেকে বেরিয়ে সে একই ধরনের সমাজে মিশে। সেই সমাজেও সে একই শিক্ষা পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার পরিবার ও সমাজ থেকে অর্জিত অন্ধবিশ্বাসকেই লালন করতে শেখায়। দরিদ্র দেশের মানুষ বের হতে পারে না, তারা মুক্তচিন্তা করতে শিখে না। 

বিজ্ঞান থেকে আমরা কি শিখি? অজানাকে জানা ও রহস্যকে উন্মোচন করা। বিশ্বাস থেকে আমরা শিখি উল্টোটা অর্থাৎ অজানাকে রহস্য দিয়ে ঢেকে রাখা আর রহস্যকে অলৌকিকতা দান করা। বিজ্ঞানের সাথে বিশ্বাসের বিরোধ এমনই। একটিতে আসক্তি আসলে অন্যটি দূরে চলে যাবে, একটি বুঁদ হয়ে থাকলে অন্যটি হারিয়ে যাবে। যুক্তিবোধ প্রাধান্য পেলে বিশ্বাস হালকা হয়ে যাবে। আবার বিশ্বাসবোধ প্রাধান্য পেলে যুক্তিবোধও হালকা হয়ে যাবে। দুটো একসাথে বাস করে না।

অন্ধদের হাতি দর্শনে হাতি গালগল্প? -
মুজিব রহমান
Nov. 23, 2024 | যুক্তিবাদ | views:292 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আমরা পাঁচ অন্ধের হাতি দর্শনের গল্পটি জানি৷ পাঁচ অন্ধকে হাতি দেখতে গেল৷ যার হাতে যা ঠেকলো সে সেটাকে ভালমতো উপলব্ধি করলো৷ সবাই নিশ্চিত হয়েই বলল আরে হাতি হল—

যে হাতির পা ধরেছিল সে বলল, ঠিক খাম্বার মতো৷ যে লেজ ধরেছিল সে বলল, ঠিক রশির মতো৷ যে শূঁড় ধরেছিল সে বলল, ঠিক সাপের মতো৷ যে পেট ধরেছিল সে বলল, ঠিক দেয়ালের মতো৷ যে কান ধরেছিল সে বলল, ঠিক কূলার মতো৷ সবাই নিজের দর্শনে অনড়৷ আলাদা অঙ্গ না ধরলে এই পাঁচটি উপাদান মিলালেও হাতি আসবে না৷

কমপক্ষে হাজার বছর আগের ধর্মগ্রন্থগুলোতে একেকটি বিষয়ের বর্ণনা অনেকটাই এরকমই৷ পৃথিবী, আকাশ, মানুষ, আত্মা. ইত্যাদি বহু বিষয়ের ব্যাখ্যাগুলো অন্ধের হাতি দর্শনের মতোই৷

তখন বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের মানুষও মনে করতো তারাই পৃথিবী, তারাই একমাত্র জনগোষ্ঠী৷ সে মোতাবেকই আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া এমনকি জাপানের আদি বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল৷ মানুষ ব্যাখ্যা তৈরি করতে নিয়ে এসেছে পেট-বানানো গল্প৷ সেই গল্পগুলোর বিবর্তনও ঘটেছে কালক্রমে৷


একটা বিষয় নিশ্চিত যে তারা মনে করতো প্রাণীর দুটো উপাদান৷ একটি নশ্বর শরীর আরেকটি অবিনশ্বর আত্মা৷ আত্মার বিশ্লেষণ করতে হলে শরীর কিভাবে সচল থাকে সেটা উপলব্ধির দরকার ছিল৷ কিন্তু ওই সময় এটা মানুষ বুঝতে শিখেনি৷ তাই আত্মা নিয়ে একেক গ্রন্থে একেক রকম ধারণা দেয়া হয়েছে৷ সেমিটিক ধর্মে বলা হয়, 'স্রষ্টা আগেই আত্মা সৃষ্টি করে রাখে৷ জন্মের আগে ঢুকিয়ে দেয় গর্ভের শিশুর মধ্যে৷ স্রষ্টা আত্মা ছিনিয়ে নিলেই মৃত্যু৷ কবে কখন ও কিভাবে ছিনিয়ে নিবে সেটাও নির্ধারিত৷ পৃথিবী ধ্বংসের পরে পুনর্জিবীত আত্মার বিচার সভা বসবে'৷ বৈদিক তথা হিন্দু ধর্মে বলা হয়, 'আত্মা ভাল মন্দের কর্মের জন্য পরের জন্মে কোথায় জন্ম নিবে তা কর্মের দ্বারা নির্ধারিত হয়৷ বৌদ্ধ ধর্মে আবার আত্মা ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন প্রাণির মধ্যেও৷ সৎ কর্ম করলে বা বৌদ্ধ ভিক্ষু হলে আত্মা মুক্তি পায় এবং বিলীন হয়ে যায় যাকে বলে নির্বাণ হওয়া৷ 

আর আজ বিজ্ঞান দেখাচ্ছে কিভাবে জীবন সচল থাকে এবং সেখানে আত্মা অপ্রয়োজনীয়৷

অন্তত এক হাজার বছর আগের মানুষ নিজেদের ভূখণ্ডগুলোকেই ভাবত দুনিয়া৷ জাপানের দ্বীপগুলো যাকে তারা দলতো নিপ্পন বা সূর্যোদয়ের ভূখণ্ড৷ তারা খবর রাখতো না কোরিয়া বা চীনের৷ অথচ বহু বছর আছে তারাও ছিল একই ভূখণ্ডে৷ ফলে শিন্টো ধর্মের পৃথিবী হল ওই নিপ্পন দ্বীপমালা! দেবতারা থাকতো সমুদ্রে৷ তারা কাদাকেলি করতে করতে সমুদ্রে বিভিন্ন দ্বীপ তৈরি করে৷ সেটাই পৃথিবী৷ এমন একটা বিশ্বাসও দেখি না যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবী গোলাকার এবং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে৷

সেমিটিক গ্রন্থে স্রষ্টা ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করে৷ বাইবেলে একদিন বিশ্রামের কথা আছে৷ আমরা আজ সপ্তাহে যে একদিন ছুটি পাই সেটা ওখান থেকেই আসা৷ স্রষ্টা সমতল পৃথিবীকে শক্ত রাখার জন্য পেরেক মেরেছে পাহাড়গুলো দিয়ে৷ পৃথিবীর উপর সাতটি আসমান দিয়েছে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান খুঁটি দিয়ে৷ দুনিয়া সৃষ্টির হাজারো রকমের ধর্মীয় ব্যাখ্যার একটিও মিলে না আজ৷

মানুষ সৃষ্টি নিয়েও হাজারো ব্যাখ্যা৷ হিন্দু ধর্মের সেই বিরাট পুরুষের কথা জানি যিনি খণ্ডবিখণ্ড হয়ে সব কিছু তৈরি করেছেন৷ তার মাথা থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, বুক থেকে বৈশ্য, পা থেকে শূদ্র তৈরি হয়েছে৷ নাড়িভূড়ি থেকে অন্যসব প্রাণি-উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়৷ সেমিটিক ধর্ম বলে স্রষ্টা নিজে একজন পুরুষ ও একজন নারী সৃষ্টি করেন৷ স্রষ্টার কথা না শোনায় তিদের স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পাঠায়৷ বাকি ধর্মগুলোতে একেকটায় একেক রকম বিশ্বাস৷ কোনটায় বলা হয়েছে এক দানবের বগলের দুই তলা থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী সৃষ্টি হয়৷ ওয়াক! কোথাও বলা হয়েছে, দেবতারা দাস তৈরি করতেই মানুষ তৈরি করেন৷ হাজারো ব্যাখ্যা৷ আবার মিলগুলোর মধ্যেও প্রভেদ অনেক৷ আদম-হাওয়া, এডাম-ইভ বা মনু-শতরূপা পুরোপুরি মিলবে না৷ অথচ বিজ্ঞান বলছে মানুষ এসেছে বিবর্তনের পথ ধরে৷

৪৩০০ টি ধর্ম বিশ্বাসের কোনটিতেই সঠিক ব্যাখ্যা মিলে না৷ আবার ব্যাখ্যাগুলোকে একত্রিত করলেও মিলে না৷ বিশ্বাসে পাওয়া তথ্যগুলো বিজ্ঞানের চোখে নিছকই গালগল্প!

করণীয় কি? হিন্দু মুসলিমের মধ্যে এত মিল এত বিভেদ? -
মুজিব রহমান
Nov. 21, 2024 | মুক্তমনা | views:290 | likes:0 | share: 0 | comments:0

এ অঞ্চলের মুসলিমদের সামান্যই বাইরে থেকে আসা। অধিকাংশই হিন্দু বা বৌদ্ধ থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে। আবার আর্যরাও বাহির থেকেই এসেছে৷ আর্যদের ধর্মীয় চেতনা স্থানীয় ধর্মের চেতনার সাথে মিলেই আজকের বৈদিক ধর্ম তৈরি হয়। আমাদের ইউনিয়নে দেবনাথ সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। দেশের সমস্ত নাথ ও দেবনাথরাই নাথ ধর্মের লোক ছিলেন। বৈষ্ণব ধর্মও আলাদা ধর্ম ছিল। শৈবরাও ছিলেন আলাদা ধর্মের। এক বৈষ্ণবদের মধ্যেও বহু মত-পথ রয়েছে। মুসলিম আগমনই হয়তো তাদের এক ধর্মে নিয়ে এসেছে। অথচ এখনো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হিন্দুরা ভিন্ন-ভিন্ন দেবতার পূজা করে। বাংলার দুর্গা দেবীর অস্তিত্ব দক্ষিণ ভারতে নেই।  বাংলাভাষী অধিকাংশ মানুষই একইরকম দেখতে,  মূলত অস্ট্রিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ যাদের মধ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জিন রয়েছে। এজন্য তাদের শংকরজাতিও বলা হয়। আবার দুই ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে বেশ কিছু মিলও পাবেন৷ মুসলিমদের আদি পুরুষ আদম-হাওয়ার মতোই হিন্দুদের রয়েছে মনু-শতরূপা! সাধারণভাবে কে হিন্দু ও কে মুসলিম ধরার কোন পথ নেই। অথচ শুধুমাত্র ধর্মের কারণে তাদের মধ্যে বিরাজ করে তীব্র বিদ্বেষ ও ঘৃণা।

আগের ধর্ম সংস্কার করেই নতুন নতুন ধর্ম এসেছে। ইহুদী-খৃস্টান-মুসলিম এর বিবর্তন আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। বৈষ্ণব ধর্ম থেকে শ্রীচৈতন্য হয়ে আজকের ইশকনের মধ্যেও একটি ধারাবাহিকতা হিসাব করতে পারি। অথবা সাংখ্য, শৈব, বৈষ্ণব ধর্ম থেকে আজকের হিন্দু ধর্ম নিয়েও পর্যবেক্ষণ করতে পারি। ধর্মগুলো শুধু স্রষ্টা বা দেবতার আরাধনাই নির্দেশ করে দেয়নি তারা একেকটা দর্শনও ঠিক করে দিয়েছে। যে দর্শন একসময় প্রাধান্য বিস্তার করতো তাদের অনুসন্ধিৎসার জবাব কিন্তু বিজ্ঞান খুঁজে নিয়েছে। বিজ্ঞানই সত্যের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। এতে দর্শনের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে পড়েছে, উন্নত দেশে ধর্মের প্রভাবও কমেছে কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার উন্নতি কমই হয়েছে। দারিদ্রতার মতো অন্ধতাও দূর হয়নি৷

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় ভারত ও পাকিস্তানের দায়িত্ব নেন দুজন প্রগতিশীল ও ধর্মের প্রতি বিশ্বাসহীন মানুষ। জওহরলাল নেহেরু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মধ্যে ধর্ম বিশ্বাসই ছিল না।

 তারা দুজনই ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তখন একটা ধারণা অনেকে করতেন যে আগামী ৫০ বছরে দক্ষিণ এশিয়াও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষে ভরে উঠবে। কিন্তু তা হয়নি। এখন দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই ধর্মান্ধতার অন্ধকার নেমে এসেছে। ১৯০৬ সালে বাংলা ভাগ হলে মুসলিমরা খুশি হয় এবং হিন্দুরা আন্দোলন করে ভারত ভাগের বিরুদ্ধে। এর একটি কারণ ছিল যে, পূর্ববঙ্গে অনেক হিন্দুর জমিদারি ছিল এবং তারা বাস করতো কলকাতায়। বাংলা ভাগ হলে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি হ্রাস পাবে। রবীন্দ্রনাথের পরিবারের পূর্ববঙ্গের কয়েকটি জমিদারি ছিল। যখন তাদের আন্দোলনে বঙ্গভঙ্গ রদ হল তখন হিন্দুরা ভিন্ন সংকট সামনে দেখতে পেল। ১৯৩১ সালের আদমশুমারী দেখেই অনেকে আৎকে উঠেন। তারা বিস্ময়করভাবে পরিসংখ্যান দেখেন যে, দুই বাংলায় মুসলিমের সংখ্যা হিন্দুর চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলও পান পরবর্তী নির্বাচনে। বাংলার পরপর তিনজন প্রধানমন্ত্রীই হন মুসলিম- শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমউদ্দিন- যাদের নিয়ে ঢাকার দোয়েল চত্বরে তিন নেতার মাজার রয়েছে। কলকাতার হিন্দু বাবুরা বুঝে গেলেন- রাজনীতিতে যত বড় নেতাই তারা হন না কেন ভোটের দৌড়ে কখনোই তারা আর পেরে উঠবেন না। সিআর দাশের মতো মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্যও কেউ নেই৷ ধর্মটাই সামনে চলে আসে, চলে আসে বিদ্বেষটাও যা নতুনও নয়। দেশভাগের পরে জমিদারি প্রথা বাতিল হয়। তাতেও হিন্দুদের প্রভাব আরেক ধাক্কায় কমে যায় কারণ অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন হিন্দু। পূর্ব বঙ্গ থেকে হিন্দুরা চলে যেতে থাকে পশ্চিমবঙ্গে আর পশ্চিম বঙ্গ থেকে মুসলিমরা আসতে থাকে পূর্ব বঙ্গে। হিন্দুদের দেশান্তরের সংখ্যাটা অনেক বেশি। এতেও হিন্দুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পূর্ববঙ্গে থাকা বহু সম্পদই তারা হয় নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে যায় নতুবা স্রেফ ফেলে রেখে যায়। পূর্ববঙ্গে হিন্দুর সংখ্যা অনেক কম থাকা সত্ত্বেও জমিদারি ও উচ্চ শিক্ষার কারণে তাদের হাতেই ছিল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষমতা। বাংলাদেশে থেকে যায় সাধারণত দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা হিন্দুরা। আমাদের গ্রামেও একসময় ভট্টাচার্য, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়, সেন ও রায় পরিবার ছিল। ১৯৩১ সালের পরিসংখ্যানে আমার ভাগ্যকুল গ্রামে ৫১% হিন্দু ছিল। এখন সংখ্যায় কমে আসলেও হিন্দু ভোটার ৩৫-৪০% এর কমবেশি। এরমধ্যে একজনও ভট্টাচার্য, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়, সেন ও রায় নাই। রয়েছেন কয়েক ঘর সাহা ও পোদ্দার আর অধিক সংখ্যক মাল ও রাজবংশী যারা জেলে সম্প্রদায়ের। দেশ ভাগের কারণে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা ক্ষমতায় যায়। সেখানে এখন ৯ কোটি মানুষের মধ্যে আড়াই কোটি মুসলিম। আবার বাংলাদেশে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দেড় কোটি হিন্দু (৮%)। দুই বাংলা মিলিয়ে দেখুন এখনো ২৫ কোটি বাঙ্গালির মধ্যে আট কোটি হিন্দু আর প্রায় তার দ্বিগুণের বেশি মুসলিম। হিন্দুদের ক্ষমতা হ্রাস ও মুসলিমদের সংখ্যাধিক্য- এই পরিসংখ্যানই হয়তো দ্বন্দ্বের ও ঘৃণার প্রধান কারণ হয়ে উঠে। তবে মুসলিমদের মধ্যে থাকা প্রকট ধর্মান্ধতা, জিহাদী চেতনা ও সুশিক্ষা বিমুখতা পারস্পরিক ঘৃণাকে বাড়িয়ে দিয়েছে৷

ভারত ভাগের পরেও পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ভিতরেও একটি প্রগতিশীল চেতনা জেগে উঠতে। বিশেষ করে বাম রাজনীতির প্রভাবে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তৈরি হচ্ছিল। সেখানে ধর্ম-অনুরাগহীন একটা শ্রেণিও ছিল যারা সমাজে প্রভাব বিস্তার করতো। কমিউনিস্ট পার্টিতে যারা নেতৃত্বে ছিল তারা অধিকাংশই হিন্দু নেতা। তারা  বস্তুবাদের চর্চাই করতেন। সেখানে যারা মুসলিম ছিলেন তারাও বস্তুবাদী চেতনাধারী ছিলেন। ফলে হিন্দু মুসলিম নেতারা কাধে কাধ মিলিয়ে আনন্দের সাথেই রাজনীতি করতে পেরেছেন। হিন্দু-মুসলিম চেতনা তাদের স্পর্শ করতো না। কিন্তু বাম দলগুলোতে হঠাৎই একটি পরিবর্তন চলে আসে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পরে।  বস্তুবাদের পরিবর্তে আসে ধর্ম-কর্ম সমাজতন্ত্রের কথা। মাওলানা ভাসানী আন্দোলনে নিয়ে আসে নামাজ ও মোনাজাত যা ইসলাম ধর্মীয় বিষয়। হিন্দুদের আস্থার জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা সেই ধারাটাই এখনো দেখছি। মঞ্জুরুল আহসান খান মাজারপন্থী সুফিবাদী দর্শনের মানুষ যা বস্তুবাদ পরিপন্থী। তিনি আবার হজ্বব্রত পালন করে শরিয়তপন্থীও হয়ে গেলেন। এমনটা আরো অনেকের মধ্যেই দেখা গেল। ইনু-মেননও হজ্বব্রত পালন করে হাজিসাব হয়ে উঠলেন। ধীরে ধীরে প্রগতিশীল হিন্দুরাও ছাড়তে থাকেন বাম রাজনীতি এবং তারা আশ্রয় নেন মূলত আওয়ামী লীগের পতাকা তলে। প্রগতি চর্চার জায়গাগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। তৈরি হয় ধর্মীয় আবহ ও বিদ্বেষ। বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিল তারা ওখানে গিয়ে করতো সিপিএম। এতে সিপিএমের শক্তিও অনেক বেশি ছিল। মুসলিমরাও সিপিএম করতো। ফলে পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রগতিশীল সমাজ তৈরি হয়েছিল। হিন্দু মুসলিমরা একসাথেই ধর্মের প্রতি উদাসীন থেকেই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড করতেন। সেই জায়গাটাও হারিয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গে বিস্ময়করভাবে সিপিএম ও সিপিআইর সমর্থকরা বিজেপিতে যোগ দিতে লাগল। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দুরা প্রায় সকলেই বিজেপির সমর্থক বনে গেল। তারা হঠাৎ করেই কি প্রগতিশীল থেকে ধর্মান্ধ হয়ে উঠল! মুসলিমরাও যোগ দিল তৃণমূল কংগ্রেসে। কেন এমনটা হল? ভারত ও বাংলাদেশে কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। পরস্পরের প্রতি বেড়েছে অবিশ্বাস ও ঘৃণা।

আমার মনে হয়েছে পারস্পরিক আস্থাহীনতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ থেকেই এটা হয়েছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ আমার ভালভাবেই পড়া আছে। হিন্দু ধর্ম নিয়মিত পড়ে এমন একজনের কাছে জানতে চাইলাম- কোন ধর্মগ্রন্থে গরুকে দেবতা বলা হয়েছে? আমরা একমত হলাম যে, কোন ধর্মগ্রন্থেই এমনটা বলা নেই। তবে গরু দিয়ে হালচাষ করা হয় এবং গাভী দুধ দেয় তাই ভারতে যখন গরুর সংখ্যা কমে গেল তখনই গরু খাওয়ার বিরুদ্ধে রাজারা ব্রাহ্মণদের দিয়ে বিভিন্ন কথা বলা শুরু করাল। 

গরু দুধ দেয় ও হালচাষে কাজে লাগে বলেই তাকে মায়ের সাথে তুলনা করে বলা হয় গো-মাতা। আর তাতে গরু না খাওয়ার একটি ভাবাদর্শ তৈরি হল। মহাভারতে যজ্ঞে গোবৎস (বালক গরু) খাওয়ার কথা বলা আছে।

 যজ্ঞে হাজার হাজার গরু কাটা হতো বলেই গরুর সংকট তৈরি হতো। কিন্তু ভারত ভাগের সময়তো গরুর অমন সংকট ছিল না। তাহলে সেই গরু না খাওয়ার তীব্রতা কিভাবে বহাল থাকলো? এখানে কি মুসলিমদের কোরবানী ও গরু খাওয়ার বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে? মুসলিমরা ধর্মীয় উৎসবে গরু ব্যবহার করে ও খায় বলে হিন্দুরা এর বিরুদ্ধে সেই প্রথা আরো জোরদার করেছে সম্ভবত(?)।

ইংরেজরা একটা চেষ্টা করেছিল ভারতীয় বৈদিক ধর্মে একেশ্বরবাদী চেতনা জাগ্রত করতে। তারা বুঝেছিল যদি এমনটা করা না যায় আর খৃস্টান ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে এতো বৈপরত্য থাকে তাহলে সংঘাত আসবেই। ইংরেজরা ব্রাহ্ম ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। রাজা রামমোহন রায়, কেশব সেন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচেষ্টা চালান। ভারতে শংকরাচার্যও একেশ্বরবাদের একটি ধারণা দিয়ে গিয়েছিলেন। ব্রাহ্ম ধর্ম ধনিক শ্রেণির মাঝে জনপ্রিয়তা পেলেও সাধারণ হিন্দুরা তা গ্রহণ করেনি প্রচণ্ড রাষ্ট্রীয় চাপ না থাকায়। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা সেটার দিকেই মনোযোগ দিয়েছে। ভারতে মুসলিম শাসনামলে ধর্মপ্রচারকগণ সুবিধা নিয়ে প্রচুর হিন্দু/বৌদ্ধকে মুসলিম বানিয়েছে। তবে রাষ্ট্র নিজে এজন্য কঠোর ছিল না। আবার তারা হিন্দু ধর্মকে একেশ্বরবাদী ধর্ম বানানোর দূরদর্শি চিন্তা করতেও পারেনি। এরমধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় নেতারা সুবিধা নেয়ার জন্য হিন্দু ও মুসলিমদের ধর্মীয় দূরত্বকে কাজে লাগিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষটা চরমভাবে জাগিয়ে রেখেছে। পৃথিবীতে ধর্মগুলোকে মোটা দাগে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটা সেমিটিক একেশ্বরবাদী আরেকটি পৌত্তলিক প্যাগান। দুটি ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে মিল কমই। তারমধ্যে আবার বিভেদ বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা সবাই চালিয়েছে। বিপরীতে প্রগতিশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক চেতনার মানুষ তৈরির চেষ্টা কোন সরকারই কোনকালে করেনি। ফলে বিভেদও দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এই আধুনিক ও সভ্য যুগে রাষ্ট্রের পক্ষে আর সম্ভব নয় মানুষের ধর্মবিশ্বাস বদলে দিয়ে আরেক ধর্মের দিকে ঠেলে নেয়া। তাহলে এই বিভেদ থেকে রক্ষার পথ কি? পথ একটাই আর তাহল বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠন করা। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের কাছেই ধর্মটা পরিস্কার হয়ে উঠে। নেতাদের কারসাজি ও প্রতারণা টের পায়। ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীদের আহবান তারা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এজন্য রাষ্ট্র ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করা থেকে বিরত থাকবে। ধর্ম হবে ব্যক্তিগত অনুশীলনের জায়গা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যবই হবে বিজ্ঞাননির্ভর অর্থাৎ বিজ্ঞান সমর্থন করে না এমন কিছ পড়ানো যাবে না। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে করতে হবে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে। তাহলেই ধর্মব্যবসায়ী ও নেতাদের এবিষয়ে আগ্রহ কমে আসবে। মানুষের মধ্যে ঘৃণাকে জাগিয়ে রাখতে তারা আর অর্থ ব্যয় করবে না। রাষ্ট্র এগিয়ে না আসলে অনেক সময় লেগে যাবে। আর এজন্য প্রগতিশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে প্রচুর কথা বলতে হবে এসব নিয়ে।

আমিও হাত দেখতে পারতাম! -
মুজিব রহমান
Nov. 20, 2024 | ভান্ডাফোঁড় | views:886 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ছাত্রজীবনে হাত দেখা শিখেছিলাম। একবার এক সন্তানসম্ভবা তরুণীবধূর হাত দেখে বললাম, আপনার ছেলে হবে; তবে সাধবানে থাকবেন ফাঁড়া আছে। আপনার মেয়ে হবে এটা কখনো কাউকে বলতাম না, বিশেষ করে প্রথম সন্তান মেয়ে হবে এটা অধিকাংশেরই প্রত্যাশা থাকে না বলেই মনে হতো। তরুণীবধূর পুত্রসন্তান হয়ে মারা যায়। অর্থাৎ ঝড়ে বগ মারা গেল কিন্তু ওই পরিবারের বিশ্বাসের মাত্রাটা ছিল অনেক বেশি। আবারো সন্তানসম্ভবা হলে আমাকে বারবার তার বাসায় দাওয়াত দিতে থাকেন। আমি থাকি হলে আর ওই মহিলা থাকে সূত্রাপুর। যাওয়া কঠিনই। ওনার স্বামী কয়েকবার আসলেন আমি তালবাহানা করি। একদিন এসে ধরে নিয়ে গেলেন। আবারো হাত দেখে বললাম এবারো ছেলে হবে এবং কোন ফাঁড়া নাই, সুস্থ সন্তান হবে। কাকতালীয়ভাবে মিলে গিয়েছিল। 


আমি একাধিক বইতে দেখেছি একই রেখার ভিন্ন ব্যাখ্যা, উল্টো ব্যাখ্যা। আসলে কথাচ্ছলে কিছু বিষয় জেনে নিয়ে সেই তথ্যই উপস্থাপন করা, যার হাত দেখবো তার সম্পর্কে কিছু তথ্য আগে থেকেই জেনে নেয়া এবং মানুষের চেহারা দেখেও কিছু অনুমান করেই হাত দেখা হয়। ওই মহিলার আত্মীয়া ছিল আমার সহপাঠী বান্ধবী। ওর কাছ থেকে কিছু তথ্য আগেই জেনেছিলাম।


আমিতো সৌখিন ছিলাম। কিন্তু এটাকে ব্যবসা হিসাবে নিয়ে প্রতারণা করছে অনেকে। এই সব প্রতারণার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোন প্রচারণা নেই। তবে ভারতে রয়েছে। ভারতের যুক্তিবাদী সমিতি ঘোষণা দিয়েছিল, যদি হাত দেখে কেউ পঞ্চাশ ভাগ সত্য বলতে পারবে তবে তাকে দেয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা (এখন সম্ভবত ৫০ লক্ষ)। তো একজন হস্তরেখাবিদ আসলেন।


১। তাকে দেয়া হয় একটি বানরের হাতের ছাপ। জ্যোতিষি বললেন, এই শিশুটি ৮০ বছর বাঁচবেন, ২৫ বছরে বিয়ে করবেন আর উচ্চ শিক্ষা লাভ করবেন।


২। এরপর তার সামনে আনা হয় একজন সফল মানুষকে যিনি দেখতে কদাকার ও রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী। তাকে দেখে জ্যোতিষি বলল, নিদারুণ দারিদ্রের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। পারিবারিক অশান্তি রয়েছে। সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।


৩। একজন খুবই সুদর্শন দরিদ্র মানুষকে ভাল পোষাক পরিয়ে তার কাছে আনা। এবার জ্যোতিষি শুধুই সফলতার কথা বললেন।


হস্তরেখা ব্যবসা একটি প্রতারণামূলক ব্যবসা। এখন এই ব্যবসার অবস্থা পৃথিবীজুড়েই বেশি ভাল না। তবুও বাংলাদেশে জ্যোতিষসম্রাটরা প্রতারণা ফাঁদ পেতে বসে আছে। বিক্রমুপুরের লিটন দেওয়ান একসময় বাসের হেল্পার ছিল এখন জ্যোতিষ সম্রাট!  মূর্খ নায়ক-নায়িকা ও নেতাদের হাত দেখার ভিডিও বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিনেতাদের মহাজ্ঞানী ভেবে কিছু অর্বাচিনও জ্যোতিষিদের স্মরণাপন্ন হচ্ছে। লিটন দেওয়ান একজন বড় মাপের প্রতারক। দেশের বহু নায়ক-নায়িকারাই তাকে হাত দেখান। রাষ্ট্রপতি আ. হামিদসহ বহু মানুষ তাকে হাত দেখিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়। লিটন দেওয়ান বিভিন্ন রকম অপকর্ম করে এখন মুক্তিদাতার আসন গেড়ে বসেছেন।


মুঠু ভাজ করার কারণেই হাতে রেখা তৈরি হয়৷ এখানে ভাগ্য লেখা থাকে না৷ বাস্তবিক ভাগ্য বলেও কিছু নেই এবং তা হাত বা কপালসহ কোথাও লেখা থাকে না৷

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929